চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ছাত্রদলের বিক্ষোভ, ছাত্রজোটের সংবাদ সম্মেলন: উপাচার্য, প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার ও প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদল। একই দাবিসহ ছয় দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট।

Sep 2, 2025 - 14:17
 0  2
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ছাত্রদলের বিক্ষোভ, ছাত্রজোটের সংবাদ সম্মেলন: উপাচার্য, প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি
ছবি-সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার ও প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদল। একই দাবিসহ ছয় দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ বিক্ষোভ করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই প্রশাসনের আর দায়িত্বে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।

বিক্ষোভে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরে, প্রশাসন কী করে’; ‘উপাচার্য হায় হায়, নিরাপত্তার খবর নাই’; ‘দফা এক, দাবি এক প্রশাসনের পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। জানতে চাইলে কর্মসূচিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল শাখার সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘এই প্রশাসন ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বারবার এই ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যখন হামলার শিকার হচ্ছিল, প্রশাসন তখন নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছে। এ প্রশাসনের আর পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।’

অন্যদিকে বেলা ১১টায় উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়িতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় নিয়ে উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন ছাত্রজোটের নেতারা।

জোটের দেওয়া বাকি দাবিগুলো হলো, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে সম্পূর্ণ ব্যয়ভার প্রশাসনের নেওয়া; হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ক্যাম্পাসে ইলেকট্রনিক কার বাড়ানো ও চক্রাকার বাস চালু করা, শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসনের রোডম্যাপ দেওয়া ও ভাতা চালু করা; ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় জোরালো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগসহ ছয়টি দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়িতে
উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগসহ ছয়টি দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়িতেছবি: জুয়েল শীল

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া। তিনি বলেন, উপাচার্য ও একজন সহকারী প্রক্টর সংঘর্ষের সব দায় আক্রমণের শিকার শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়েছেন। ২০২৩ সালে শাটল ট্রেন দুর্ঘটনার সময় সাবেক উপাচার্য শিরিণ আখতারও শিক্ষার্থীদের ওপর দায় দিয়ে এমন ন্যক্কারজনক রাজনীতি করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ এই উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কারণ, শিক্ষার্থীরাই এখন এই প্রশাসন আর প্রক্টরিয়াল বডির কাছে অনিরাপদ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জশদ জাকির, সহসভাপতি উম্মে সাবা, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক মশ্রেফুল হক ও ইউপিডিএফ–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা।

ভাড়া বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন—এমন খবরে গত শনিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় জোবরা গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। সেদিন রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে দুই পক্ষ সরে যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এর জের ধরে গত রোববার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। দুই দিনের সংঘর্ষে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এমবি এইচআর