সহিংস পরিবেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন অসম্ভব : ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান

সহিংস পরিবেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন অসম্ভব বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান। তিনি বলেছেন, ‘সহিংস পরিবেশ ক্ষমতার অপব্যবহার পুনর্বহালে সহায়তা করে।

Sep 4, 2025 - 17:50
 0  2
সহিংস পরিবেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন অসম্ভব : ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান
ছবি-সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সহিংস পরিবেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন অসম্ভব বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান। তিনি বলেছেন, ‘সহিংস পরিবেশ ক্ষমতার অপব্যবহার পুনর্বহালে সহায়তা করে। তাই এটি প্রায় সব দেশেই গুরুতর উদ্বেগের যেখানে সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষ এই ধরনের সহিংসতার সম্মুখীন হয়।’

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমের ওপর দমন-হুমকি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘গণমাধ্যমকে দমন, অবাধ তথ্যপ্রবাহ বন্ধ করা এবং সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে হুমকি প্রদর্শন গোপনীয়তার সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেয়। আর গোপনীয়তার সংস্কৃতি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি শক্তিশালী অস্ত্র।’

ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান বলেন, ‘সাংবাদিকরা সত্য তথ্য তুলে ধরেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, সে জন্য তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। সুশীল সমাজের কাছে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনো মাধ্যম নেই, তবে আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলা।

আমরা আরো যেটা করি সেটি হলো, এসব ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকি। সহিংস পরিবেশে কখনোই গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন করা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর দুর্নীতির সূচক প্রকাশ করি, যদিও সব সেক্টরের বিষয় সেখানে পুরোপুরি আসে না। এটা সত্য যে বিগত বছরগুলোতে দুর্নীতির সূচক বাংলাদেশে কমেছে।

তবে প্রতিফলন স্বরূপ গত বছর আগস্টে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটতে দেখা গেছে। তারপরে কি দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে, স্পষ্টতই না। তবে কি বেড়েছে? এ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে বাংলাদেশে সংস্কারকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিছু কাজ শুরু হয়েছে, কিছু বাস্তবায়নের পথে আছে। এই কাজগুলো কিন্তু দুর্নীতির সূচক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে।
যেসব দেশ তাদের সূচকে উন্নতি করে, আমরা তাদের বলি যেসব ক্ষমতাবান লোক দুর্নীতিতে জড়িত ছিল তাদের বিচারের আওতায় এনে সুশাসন নিশ্চিত করতে।’

ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান বলেন, ‘আমরা সব সময় ক্ষমতার সঙ্গে এবং ক্ষমতার বিপক্ষে কাজ করেছি। এর অর্থ হচ্ছে আমরা অংশগ্রহণ করছি আবার সমালোচনাও করছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কী হয়েছে, আমাদেরও সমালোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোনো সরকার নেই, যারা আমাদের সমালোচনা করেনি। আমি মনে করি, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন হবে সেই সরকারও টিআইবির কর্মকাণ্ডে অখুশি হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে জিডিপির সঙ্গে তুলনা করলে দেখবেন জনগণের টাকা চুরি হয়েছে, জনগণকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। ঘুষের পেছনে জনগণের যে অর্থ ব্যয় হয়েছে সেটার হিসাব কখনো পাচার করা অর্থের সঙ্গে যথাযথভাবে তুলনা করা যাবে না। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যে ১৬ বিলিয়ন ডলার গায়েব হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশের মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে। এই অর্থপাচার না করলে অনেক সুযোগ তৈরি করা যেত বাংলাদেশে। এই অর্থ বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, অবকাঠামো, জরুরি প্রয়োজনীয় সেবার জন্য ব্যয় করা যেত। এই অর্থ চুরি না হলে বাংলাদেশের জিডিপি আরো অনেক বেশি হতো।’

টিআই চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমাদের মতো বৈশ্বিক সুশীল সমাজ বাংলাদেশে বর্তমানে যা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশংসা করছে। তারা বাংলাদেশের দিকে নজর রাখছে। আমরা দেখছি যে বাংলাদেশ সরকার সংস্কারকাজ হাতে নিয়েছে। এই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন করা হয়েছে। সংস্কার সুপারিশের অনেক কিছুই টিআইবি জানিয়েছে। আমাদের স্পষ্ট পরামর্শ হচ্ছে, এই সংস্কারগুলো টেকসই হতে হবে।’