বাজারে কমছে না নিত্যপণ্যের দাম; ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ

Sep 6, 2025 - 10:35
 0  2
বাজারে কমছে না নিত্যপণ্যের দাম; ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস সবকিছুই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।

গতকাল রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির পাশাপাশি মাছ ও মুরগির বাজারেও ক্রেতাদের ভোগান্তি বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৬৫-১৭০ টাকা, লেয়ার ও সোনালি মুরগি যথাক্রমে ৩২০-৩৪০ এবং ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।

গরু ও খাসির মাংসের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও তা নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসি বা ছাগলের মাংস এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, প্রতিদিনের বাজার খরচ সামলানো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। নুরুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্রয়লার মুরগি আগেও কম দামে পাওয়া যেত। এখন কেজিপ্রতি ১৬৫ টাকা। বাজারে আসা দুঃসহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাম কমবে বলে অপেক্ষা করি, কিন্তু কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

আরেক ক্রেতা হাবিবুল বাশার বলেন, ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগি কেনা সম্ভব নয়। সোনালি বা লেয়ার কিনতে গেলে একটি মুরগির দামই ৩০০ পার হয়ে যায়, অথচ ওজনে এক কেজিও হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে ব্রয়লার কিনতে হচ্ছে।

এ দিকে বিক্রেতাদের দাবি, দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনতে হয়। মুরগি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, খামারে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম বেশি। তাই খুচরা বাজারেও দাম কমানো যাচ্ছে না।

অন্য দিকে মাছের বাজারে দেখা গেছে, আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকায়। মৌসুম সত্ত্বেও দাম না কমায় ক্রেতারা হতাশ। মাছ বিক্রেতা জামাল হোসেন জানান, নদীতে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। জোগান কম থাকায় দামও বেশি।’

এ ছাড়া চাষের পাঙ্গাস মাছ ২০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। রুই মাছের দাম আকারভেদে ৩৪০-৩৮০ টাকা কেজি।

ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, সাধারণত মৌসুমে ইলিশের জোগান বাড়ে এবং দাম কমে আসে। কিন্তু এবার বাজারে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে ছোট ইলিশও কেজি ১২০০-১৫০০ টাকার নিচে নেই। ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য ইলিশ কেনা বিলাসিতার পর্যায়ে চলে গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রেতারা বলছেন পুরো মাস ধরে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। বর্তমানে আলু কচুরমুখি ও কাঁচা পেঁপে ছাড়া প্রায় সব সবজির দামই ৮০-১০০ টাকা বা তারও বেশি। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, প্রতি কেজি পটল ৮০ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ৮০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ১০০ টাকা, বেগুন (লম্বা) প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া, প্রতিকেজি বরবটি ৯০-১০০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, কচু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকড়োল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বেশ কিছু দিন যাবৎ সবজির অতিরিক্ত দাম যাচ্ছে। ৮০-১০০ টাকার নিচে বলতে গেলে বাজারে কোনো সবজি নেই। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এত দামে সবজি কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেই এক-একটা আইটেমের সবজি আধা কেজি করে কিনলাম। এতদিন ধরে সবজির বাজার বাড়তি যাচ্ছে অথচ বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, সবজির দাম বাড়তি থাকায় আমাদেরও ব্যবসা কমে গেছে। যে ক্রেতা আগে এক কেজি করে সবজি কিনতেন, তিনি এখন আধা কেজি করে সবজি কিনছেন। বলতে গেলে আধা কেজি করে সবজি কেনা ক্রেতার সংখ্যাই এখন বেশি। আগে যেখানে সারা দিনে এক আইটেম সবজি ২০ কেজি বিক্রি করতাম, এখন সেই সবজি সারাদিনে বিক্রি হয় পাঁচ কেজি। ফলে আমাদের ব্যবসাও আগের চেয়ে কমে গেছে।

মগবাজারের সবজি বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, আর কিছুদিন সবজির দাম বাড়তি থাকবে। কারণ, এখন বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত সবজির দাম এমন বাড়তি থাকবে। কারণ, চাহিদার তুলনায় এখন বাজারে সবজির সরবরাহ অনেকটাই কম।

এমবি/এসআর