ক্রমাগত বন্ধ হচ্ছে কারখানা কর্মহীন হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক

দেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে।  বিনিয়োগের স্রোত না ফিরলে শিল্প ও কর্মসংস্থান দুই-ই হুমকির মুখে পড়বে। দেশে বহু ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা আজ টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে।

Sep 17, 2025 - 20:36
 0  2
ক্রমাগত বন্ধ হচ্ছে কারখানা কর্মহীন হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক
ছবি-সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে।  বিনিয়োগের স্রোত না ফিরলে শিল্প ও কর্মসংস্থান দুই-ই হুমকির মুখে পড়বে। দেশে বহু ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা আজ টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে। এই লড়াইয়ে কেউ হেরে যাচ্ছেন, কেউ বা হারতে হারতে টিকে আছেন। যদি এই ধারা চলতে থাকে, তবে জাতীয় অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটে পড়বে। 

এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সরকার, ব্যাংক ও নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত উদ্যোগই পারে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিতে। আমরা মনে করি, সময় ফুরিয়ে আসার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক দশকে এক উজ্জ্বল পথচলা দেখিয়েছে। তৈরি পোশাক, কৃষি ও ক্ষুদ্রশিল্পের বিকাশ আমাদের প্রবৃদ্ধিকে করেছে গতিশীল। অর্থনীতির ভিত শক্তিশালী করার অন্যতম ভিত্তি হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানা।

কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতা এক ভিন্ন চিত্র সামনে এনেছে- নতুন বিনিয়োগ কার্যত থেমে গেছে, ছোট-বড় বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

 

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে নগরাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ছোট ছোট শিল্প-উদ্যোগ। এ শিল্পগুলোতে একদিকে যেমন বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, অন্যদিকে জাতীয় উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ নানান প্রতিকূল অবস্থার কারণে এ ধরনের শিল্প একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশে নতুন নতুন সমস্যার কারণে নানা মুখী ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে অস্থিরতা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। 

অনেক কারখানায় বিদ্যুৎ থাকলেও গ্যাস নেই, আবার কোথাও গ্যাস সংযোগ থাকলেও চাপ কম। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, আর উৎপাদন কমে আসছে।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ছোট উদ্যোক্তা ও বড় উদ্যোক্তা উভয়েরই অবদান রয়েছে। তবে ছোট ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে হলে ব্যাংক বৈষম্য দূর করতে হবে। বড় ব্যবসায়ীরা সহজেই স্বল্পসুদে বিপুল অঙ্কের ঋণ সুবিধা পেলেও, অন্যদিকে ছোট ব্যবসায়ীরা সীমিত অঙ্কের ঋণ নিতে গেলেও উচ্চসুদ এবং নানান শর্তের মুখোমুখি হন।

বড় ব্যবসায়ীরা ৭-৯ শতাংশ সুদে ঋণ পেলেও ছোট ব্যবসায়ীদের অনেক সময় ১২-১৪ শতাংশ সুদ দিতে হয়। এতে তাদের ব্যবসার খরচ বেড়ে যায় এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

 

অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যাংকের কঠিন শর্ত পূরণ করতে পারেন না। অনেকে আবার উচ্চ সুদের চক্রে পড়ে মূলধন হারিয়ে ফেলেন। সরকার যদিও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, কিন্তু বাস্তবে সেই সহায়তা খুব সীমিত সংখ্যক উদ্যোক্তার কাছেই পৌঁছেছে। ফলে অধিকাংশ ছোট শিল্প কারখানা আর্থিক সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভাবেন, ব্যাংক ব্যবস্থা কেবল ধনীদের জন্য কাজ করে, গরিব বা মধ্যবিত্ত উদ্যোক্তাদের জন্য নয়। এর ফলে অনেকেই বিকল্প পথ যেমন এনজিও ঋণ বা অনানুষ্ঠানিক ধারদেনা দিকে ঝুঁকে, যেখানে সুদের হার আরও বেশি।

 

আরো বিষয় হচ্ছে, শিল্প কারখানা চালাতে কাঁচামালের প্রাপ্যতা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায় তখন কাঁচামাল আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। সে সময় বড় শিল্প উদ্যোক্তারা কাঁচামাল মজুত রাখলেও ছোট উদ্যোক্তারা তা রাখতে পারেন না। ফলে তাদের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।

 

অর্থনীতির প্রাণশক্তি হলো বিনিয়োগ। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নতুন বিনিয়োগ তেমন আসছে না- এটি নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীন হয়ে পড়েছেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ঝুঁকি দেখে। এর ফলে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না, পুরনো শিল্প টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত।

 

দেশে ছোট শিল্প গুলোতে কাজ করা শ্রমিকদের সংখ্যা বিশাল। বিশেষ করে আধা-শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত মানুষরা এসব কারখানার ওপর নির্ভর করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। যখন একটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছে, ওই শ্রমিকদের অনেকেই নতুন কাজ পাচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য আরও বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে হতাশায় ভোগছে কেউ কেউ অপরাধ প্রবণতার দিকেও ঝুঁকছে।

এমবি এইচআর