জাতীয় পার্টি ভাঙচুর করে না, এরা নির্বাচন করে পার্লামেন্টে যায় : আনিসুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ ছাড়া কোনো সংস্কার আইনি ভিত্তি পাবে না বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের কথা বলছেন, কোনো কিছুই এগুলো হবে না। এগুলো করতে পারবে না। এগুলোর কোনো আইনি ফাউন্ডেশন থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়, এরা বিপ্লব করে না, এরা ভাঙচুর করে না। এরা নির্বাচন করে, পার্লামেন্টে যায়। পার্লামেন্টে গিয়ে যে সরকার থাকে সেই সরকারের বিরোধিতা করে। ২০১৪ সালে শুধু জাতীয় পার্টি নির্বাচন করেনি, অনেক করেছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে দলের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে কেউ লিডার অব দ্য অপোজিশন হতে চায়, কেউ সরকার গঠন করতে চায়, সেই ক্যালকুলেশন করে আমাদের ওপর দায় দিয়ে এ দেশের নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। আপনারা এটা প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না।’
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী তাদের নেতৃত্বে কয়েকটা দফা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা মনে করছেন কোনো মতে একটি ইলেকশন হয়ে গেলে সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। আমরাও মনে করি নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকার গঠন করা যায় না। তবে নির্বাচনই কি একমাত্র উত্তর? মুসোলিনি, হিটলার তারা নির্বাচিত সরকার ছিলেন। তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। যেনতেন নির্বাচন হলে হবে না। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে, নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে, নির্বাচন ট্রান্সপারেন্ট হতে হবে।’
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, ‘মানুষকে যদি সম্পৃক্ত করতে না পারেন, ২০২৪ সালে বিএনপিকে বাদ দিয়ে, জামায়াতকে বাদ দিয়ে যে নির্বাচন হয়েছিল সেখানে লোক আসেনি। আমি আপনাকে বলতে পারি এখনো লোক আসবে না এবং এই নির্বাচন একপেশে একটা নির্বাচন হবে। কারণ বর্তমান যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, এই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে যদি নির্বাচন করতে যান, সে নির্বাচন কোনো দিন নিরপেক্ষ হবে না।’
প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘যে প্রশাসনে পূর্ণভাবে পলিটিসাইজড হয়ে গেছে সে প্রশাসন দিয়ে আপনি কিভাবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন?’
তিনি বলেন, ‘আজ ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নির্বাচন করছেন, সেখানে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে উনি কি বিএনপিপন্থী না জামায়াতপন্থী না ছাত্রপন্থী। যেখানে আজ প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন তাদের সম্বন্ধে কথা হচ্ছে উনি কোন দলের। সুতরাং যে প্রশাসন দলীয়করণ হয়ে গেছে, সেই প্রশাসনের আন্ডারে আপনি নির্বাচন করতে পারবেন?’
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, ‘শিগগিরই নির্বাচন চাই, দেখেন প্রত্যেকটা জায়গায় কী হচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় ঘর দখল করছে, মামলা বাণিজ্য হচ্ছে। একদিকে আইন করছেন যে এমন মামলা নেওয়া উচিত হবে না, সম্পৃক্ত এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না, আরেক দিকে মামলা নিচ্ছেন। চাঁদাবাজি হচ্ছে, লুটতরাজ হচ্ছে, দখল হচ্ছে সেগুলো আপনারা বন্ধ করতে পারছেন না। আপনারা সেখানে নির্বাচন করার কথা কিভাবে ভাবছেন? আমি যখন এটা বলছি তার মানে আমি নির্বাচন চাই না তা নয়, আমি নির্বাচন চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে হবে।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এবং বিভিন্ন দল অংশগ্রহণ করে ২০১৪ সালের আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে আমরা আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিলাম। আমরা সেখান থেকে বেনিফিট পেয়েছি। এই কথাগুলো বলে আমাদের জাতীয় যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে সেই প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার একটা চেষ্টা চলছে। যারা অভিযোগ দিচ্ছেন তারা সেই অভিজ্ঞতার চেয়েও বড় বড় অভিযোগের অভিযুক্ত বলে আমি মনে করি। জাতীয় পার্টি মনে করে কাউকে পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে যাব সেটা না। কারণ, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সবাইকে দরকার। সবাইকে আমরা সাথে নিয়ে একসাথে এগিয়ে যেতে চাই।’
জাতীয় সংসদ ছাড়া কোনো সংস্কার আইনি ভিত্তি পাবে না বলে মন্তব্য করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের কথা বলছেন, কোনো কিছুই এগুলো হবে না। এগুলো করতে পারবে না। এগুলোর কোনো আইনি ফাউন্ডেশন থাকবে না। আপনি যে সংস্কারের কথা বলছেন, জোর করে ওপর থেকে চাপিয়ে আপনি সংস্কার করতে পারবেন? এই সংস্কার জনগণকে নিয়ে করতে হবে। জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তাদের মাধ্যমেই একমাত্র এই সংস্কার। আমেরিকা থেকে আসা, লন্ডন থেকে আসা, বিদেশ থেকে আসা, বড় বড় পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে কোনো লাভ হবে না। তারা যদি ইলেক্টেড হয়ে পার্লামেন্টে যান ওয়েল অ্যান্ড গুড। এ দেশের শাসনভার আমাদের কনস্টিটিউশনে আমাদের সংবিধানে আছে, ইলেক্টেড মেম্বার্স অব পার্লামেন্ট।’
এমবি/এসআর