চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা পদক্ষেপে বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন উত্তেজনা

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবার নতুনভাবে উত্তপ্ত হয়েছে সমুদ্রপথে। বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতি এখন একে অপরের শিপিং কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত বন্দর ফি আরোপ করে বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

Oct 15, 2025 - 13:57
 0  2
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা পদক্ষেপে বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন উত্তেজনা
ছবি-সংগৃহিত

মেঘনাবার্তা প্রতিনিধিঃ
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবার নতুনভাবে উত্তপ্ত হয়েছে সমুদ্রপথে। বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতি এখন একে অপরের শিপিং কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত বন্দর ফি আরোপ করে বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই সমুদ্রগামী শিপিং সংস্থাগুলোর ওপর অতিরিক্ত চার্জ নেওয়া শুরু করেছে। খেলনা থেকে শুরু করে অপরিশোধিত তেল পর্যন্ত সবকিছু পরিবহনে নিয়োজিত এই সংস্থাগুলোর ওপর আরোপিত ফি-ই এখন নতুন সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে।

গত সপ্তাহে চীন বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার ঘোষণা দেয়, আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর তিনগুণ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দেন। এতে দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়।

তবে সপ্তাহান্তে উভয় পক্ষই আলোচনার ইঙ্গিত দিয়ে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। চীন ঘোষণা দিয়েছে, মার্কিন মালিকানাধীন বা মার্কিন পতাকাবাহী জাহাজগুলোর ওপর বিশেষ চার্জ আরোপ করা হবে, তবে চীনা জাহাজগুলো এই শুল্ক থেকে মুক্ত থাকবে।

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, চীন এই ফি-সংক্রান্ত ছাড়ের বিস্তারিতও জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মেরামতের উদ্দেশ্যে চীনা শিপইয়ার্ডে প্রবেশ করা খালি জাহাজগুলো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় দেশের পদক্ষেপে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের বিচ্যুতি ঘটতে পারে। গ্রিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এক্সক্লুসিভ শিপব্রোকার্সের মতে, এই “সামুদ্রিক করযুদ্ধ” বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়াবে এবং শিপিং খাতে ব্যয় বেড়ে যাবে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর সামুদ্রিক শিল্পে একচেটিয়া আধিপত্য কমাতে বিশেষ ফি আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও একই দিনে পাল্টা ফি কার্যকর করার ঘোষণা দেয়।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এড ফিনলে-রিচার্ডসনের মতে, বর্তমানে দুই দেশ এমন এক অচলাবস্থায় রয়েছে যেখানে উভয়পক্ষই “গোপনে নিজের ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করছে।”

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনা কন্টেইনার কোম্পানি কসকো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ২০২৬ সালে প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ডলারের ব্যয়ের অর্ধেক বহন করবে বলে অনুমান।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মার্স্ক, হাপাগ-লয়েড ও সিএমএ সিজিএম এর মতো বড় শিপিং কোম্পানিগুলো ঝুঁকি কমাতে চীন-সম্পর্কিত রুট সীমিত করেছে।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি সংঘাত বেছে নেয়, চীনও প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত; কিন্তু আলোচনার পথ খোলা রয়েছে।”

সম্পর্কিত আরেক পদক্ষেপে, চীন দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হানহা ওশান-এর মার্কিন-সম্পর্কিত পাঁচটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পরিচালিত এলএনজি ও এলপিজি বহনকারী জাহাজগুলোর জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে।

বিশ্ববাজারে এই পাল্টা-পাল্টি অবস্থানের প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। ক্লার্কসনস রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন চীনা বন্দর ফি বিশ্বব্যাপী তেল ট্যাঙ্কারের ১৫ শতাংশ এবং কন্টেইনার জাহাজের ১১ শতাংশকে প্রভাবিত করতে পারে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় নতুন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে এবং পরিবেশবিষয়ক নীতি বাস্তবায়নেও প্রভাব পড়বে।

অ্যাথেন্স-ভিত্তিক এক্সক্লুসিভ জানিয়েছে, “বাণিজ্য ও পরিবেশনীতি এখন রাষ্ট্রীয় অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। সমুদ্রপথ, যা একসময় নিরপেক্ষ বাণিজ্যের প্রতীক ছিল, তা এখন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার হাতিয়ার হয়ে উঠছে।”

এমবি এইচআর