সব রেকর্ড ভেঙেচুরে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ইতিহাস
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ইতিহাস গড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) এই রেকর্ড তৈরি হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ইতিহাস গড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) এই রেকর্ড তৈরি হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ শিগগিরই সুদের হার কমাবে—এমন প্রত্যাশাও দামের ঊর্ধ্বগতি ঘটিয়েছে।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট গোল্ডের দাম দাঁড়ায় আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ১৭ দশমিক ১৬ ডলার—যা আগের দিনের চেয়ে ০.৯ শতাংশ বেশি। ডিসেম্বর সরবরাহযোগ্য যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার চুক্তিতেও দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৪০ ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৩ শতাংশ। গত বছরও বেড়েছিল ২৭ শতাংশ। ধারাবাহিক এই উত্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আউন্সপ্রতি ৫ হাজার ডলার ছোঁয়ার আশাবাদ তৈরি করেছে।
স্বাধীন ধাতু ব্যবসায়ী তাই ওয়াং বলেন, “বাজারে এখন অগাধ আস্থা কাজ করছে। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানো অব্যাহত রাখবে, যা স্বর্ণের দামকে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।” তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয় বা ইউক্রেন যুদ্ধে অগ্রগতি দেখা যায়, তবে সাময়িকভাবে দাম কিছুটা কমতে পারে।”
দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা উল্লেখ করছেন—মার্কিন সুদহার কমানোর প্রত্যাশা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনা, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ETF) বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দুর্বল মার্কিন ডলার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে টানা সাত দিন ধরে সরকার বন্ধ থাকায় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বন্ধ রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প তথ্যের ওপর নির্ভর করছেন। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত যে, ফেড অক্টোবরের বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাবে এবং ডিসেম্বরে আরও এক দফা কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, “অনিশ্চয়তা বাড়লেই সাধারণত স্বর্ণের দাম বাড়ে। এবারও সেটি ঘটছে।” তবে তিনি সতর্ক করেন, “আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলার ছাড়ানোর পর অনেক বিনিয়োগকারী লাভ তুলে নিতে পারেন, যা স্বল্পমেয়াদে দাম কমাতে পারে।”
‘ফিয়ার অব মিসিং আউট’ বা সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে অনেক বিনিয়োগকারী এখন বাজারে প্রবেশ করছেন। এর সঙ্গে ফ্রান্স ও জাপানের রাজনৈতিক টানাপোড়েনও স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়িয়েছে। জাপানে সানায়ে তাকাইচি ক্ষমতাসীন দলের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর দেশটিতে ব্যয়ভিত্তিক নীতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বিশ্লেষকদের ভাষায় “রান ইট হট” ট্রেডকে আরও শক্তিশালী করছে।
আগামী বছরগুলোতেও স্বর্ণের দাম উঁচুতে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গোল্ডম্যান স্যাকস ও ইউবিএস ইতোমধ্যে তাদের স্বর্ণমূল্যের পূর্বাভাস বাড়িয়েছে, কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয় ও ETF বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
শুধু স্বর্ণ নয়, অন্যান্য মূল্যবান ধাতুতেও দাম বেড়েছে। স্পট সিলভারের দাম বেড়ে হয়েছে আউন্সপ্রতি ৪৮ দশমিক ৪৪ ডলার (১.৩% বৃদ্ধি), প্লাটিনামের দাম ১ হাজার।
এমবি এইচআর