পাহাড়ি মেয়েদের পোশাকে ছবি, চাকসু শিবিরের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী জিহাদ হোসাইন নিজের ফেসবুক আইডিতে পাহাড়ি নারীদের পোশাক পরে তোলা কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন।

মেঘনাবার্তা প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী জিহাদ হোসাইন নিজের ফেসবুক আইডিতে পাহাড়ি নারীদের পোশাক পরে তোলা কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন। ছবিগুলোর ক্যাপশন ছিল—‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’। তবে সমালোচনার মুখে তিনি পোস্টগুলো মুছে ফেলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।
তবে বামপন্থী গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট–সমর্থিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এই পোস্টের মাধ্যমে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল। অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী সুদর্শন চাকমা এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম (জশদ জাকির)।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, জিহাদ হোসাইন গতকাল শুক্রবার তাঁর ফেসবুক আইডিতে দুটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে পাহাড়ি নারীদের পোশাক পুরুষদের দিয়ে পরিয়ে তোলা হয়েছে। এতে একটি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যা তাদের সাংস্কৃতিক অনুভূতিতে আঘাত হানে। এ কাজ নির্বাচনী আচরণবিধির ৫(গ) ও ১০(ক) ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
একই সঙ্গে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল শিবির–সমর্থিত সম্প্রীতি শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিবের বিরুদ্ধেও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে। তাদের দাবি, সাঈদ বিন হাবিব গত বুধবার সমাজবিজ্ঞান অনুষদের এক শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান, যা আচরণবিধির ৪(ঙ) ও ৬(জ) ধারার লঙ্ঘন।
চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, ব্যক্তিগত আক্রমণ, ধর্মীয় বা বর্ণবৈষম্যমূলক উসকানি, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়—এমন বক্তব্য বা পোস্ট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একইভাবে শ্রেণিকক্ষ বা করিডরে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণাও করা যাবে না।
এ বিষয়ে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী সুদর্শন চাকমা বলেন, “আমরা সুস্পষ্ট প্রমাণসহ নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি, কমিশন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।” তিনি আরও বলেন, “পাহাড়ি নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পুরুষদের দিয়ে পরিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা একটি জাতির সংস্কৃতিকে অবমাননা করা এবং তাদের অনুভূতির ওপর সরাসরি আঘাত।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিবির–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী জিহাদ হোসাইন বলেন, “পাহাড়িদের পোশাক সম্পর্কে আমার পুরো ধারণা ছিল না। আমি সম্প্রীতির বার্তা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অজ্ঞতার কারণে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।”
জিএস প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব বলেন, “আমি কোনো শ্রেণিকক্ষে প্রচারণা চালাইনি। কেবল এক জুনিয়র শিক্ষার্থীর আহ্বানে কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিত হতে গিয়েছিলাম।”
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানান, “আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আচরণবিধি কমিটির পরিচালক অধ্যাপক আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ বিষয়টি তদন্ত করছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এমবি এইচআর