বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

Sep 1, 2025 - 11:24
 0  2
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দীর্ঘ দেড় যুগ পর অনুকূল পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে দলটি। বিগত ফ্যাসিবাদ আমলের মতো নেই হামলা-মামলা গ্রেপ্তারের ভয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাণীতে তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুন্ন রেখে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের নিবেদন করে বিএনপি আগামী দিনগুলোয় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হন। ওই সময় বেশ কিছু ঘটনার একপর্যায়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠার পর নানা ঘাত-প্রতিঘাত সইতে হয়েছে বিএনপিকে। বলা হয়েছিল, জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর তার অবর্তমানে বিএনপি টিকবে না। তবে সে ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হয়েছিল অচিরেই। তিন বছরেরও কম বয়সী বিএনপি শুধু টিকেই যায়নি, বরং গৃহবধূ খালেদা জিয়ার দৃঢ়চেতা, আপসহীন ও সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে এগিয়েছে দুর্দান্ত গতিতে। দোর্দ- প্রতাপশালী স্বৈরশাসক মরহুম এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এক দশকের মাথায় ১৯৯১ সালে বিপুল সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল বিএনপি। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আরও সুসংগঠিত।

দলটির দীর্ঘ পথচলা যেমন ইতিহাসের গর্ব ও বড় অর্জন, তেমনই বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন করে টিকে থাকাটাও চ্যালেঞ্জ। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রাণ ফিরে পায় বিএনপি। বুকভরে শ্বাস নিতে পারছে। শেখ হাসিনার পলায়ন ও সরকারের পতনের পর বিএনপির সামনে এখন ক্ষমতায় ফেরার হাতছানি। বিশেষ করে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মামলার বেড়াজাল থেকে স্থায়ী মুক্তি পেয়েছেন। লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। তার বক্তব্য প্রচারেও নেই বিধিনিষেধ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন। সম্প্রতি কিছু নেতা রাজনৈতিক পুরনো মামলায় দু-এক দিন কারাবাসের পর মুক্ত হচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা স্বস্তিতে চলাফেরা ও নির্বিঘেœ কর্মসূচি পালন করছেন। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি এখন চাঙা ও ফুরফুরে। সব মিলিয়ে সারা দেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপ্ত ও চাঙাভাব বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ সাড়ে ৪ দশকেরও বেশি সময়ের রাজনৈতিক পথচলায় বিএনপি কখনো ক্ষমতায় থেকেছে, কখনো আন্দোলনে। বিগত দেড় যুগ রাজপথেই কেটেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। তারা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে অবিচল ছিলেন। অবশেষে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ নতুন এক রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। আওয়ামী লীগ রাজনীতির বাইরে চলে যাওয়ায় বিএনপির সামনে অবারিত সুযোগ এসেছে নিজেদের নতুন করে জনগণের সামনে উপস্থাপনের। চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি এমন একটি সময়ে সাতচল্লিশে পা রাখছে, যখন দীর্ঘ দেড় যুগের ঘোর অমানিশা কাটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতছানি দিচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানোত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রেখে অন্তর্র্বর্তী সরকারের আমলে একটি নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন আদায় করাটাই মুখ্য চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন দলটিকে দ্বিধায় ফেলেছে। তরুণ ভোটারদের আস্থায় আনা এবং ‘জুলাই সনদ’র ঘোষণা ও কার্যকর করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি জনগণের সামনে নতুন কী দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে পারে, সেটিই মূল পরীক্ষা।

ইতিমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন যতটা সহজ হবে ভাবছেন, ততটা সহজ নয়।’ সেই সঙ্গে নতুন প্রশ্নও উঠেছে, বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা কিংবা আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাবনা কতটুকু? অবশ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই পথ চলতে হচ্ছে বিএনপিকে। এরই মধ্যে দেশের সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে বিএনপি অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি পালন শুরু হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা ইত্যাদি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তারেক রহমানের বাণী  : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের আস্থা ও বিশ^াস অক্ষুণœ রেখে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের নিবেদন করে বিএনপি আগামী দিনগুলোতেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেছেন, আইনের শাসন, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এজন্য জনগণের নির্বাচিত জবাবদিহিমূলক সরকার অতীব জরুরি। বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থা কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতা-উত্তর আওয়ামী দুঃশাসনে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকান্ড সাধারণ বিষয় হয়ে ওঠে। যার অনিবার্য পরিণতি হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। শহীদ জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে আবার বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করে জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। শহীদ জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি ৪৭ বছরে কয়েকবার সুষ্ঠু নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি এবং কল্যাণে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘নানামুখী সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের মধ্যেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় চির উন্নতশির বিএনপি অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নির্দ্বিধায় জীবন উৎসর্গ করেছেন অসংখ্য নেতাকর্মী।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি : এদিকে ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ১৬ সদস্যের জাতীয় উদযাপন কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং সদস্য সচিব হয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযপানে ছয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ ভোরে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া এদিন সারা দেশে সব মহানগর ও জেলায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং র‌্যালি হবে। আগামীকাল বেলা ২টায় ঢাকায় নয়াপল্টনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি হবে। ৩ সেপ্টেম্বর দেশের সব উপজেলা ও পৌর এলাকায় আলোচনা সভা ও র‌্যালি হবে। ৪ সেপ্টেম্বর সব মহানগর, জেলা-উপজেলায় বৃক্ষরোপণ, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান হবে। ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি গোলটেবিল আলোচনা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বিএনপির পক্ষ থেকে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

এমবি/এসআর