পৃথক রাজ্যের দাবিতে উত্তাল লাদাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পৃথক রাজ্যের দাবিতে উত্তাল ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ। রাজধানী লেহতে এ নিয়ে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খল পরিবেশ। জলবায়ুকর্মী ও সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুকের অনশনে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে বুধবার হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী রাস্তায় নেমে আসে। প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও দ্রুত পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যায়।
পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। পরবর্তীতে তা ব্যাপক সংঘর্ষে রূপ নেয়। উত্তেজনার মধ্যে আন্দোলনকারীরা এক সিআরপিএফ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে গোটা শহরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৭০ জন।
আগামী ৬ অক্টোবর লাদাখের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে কেন্দ্রের। কিন্তু এর আগেই লেহ শহরে বিক্ষোভ করেন একদল যুবক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রতিবাদে অংশ নেওয়া অধিকাংশই ছিলেন তরুণ প্রজন্মের ছাত্রছাত্রী। তারা ‘লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য করো’ ও ‘কেন্দ্র সরকারের দায়িত্ব পালন করো’ স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস সত্তে¡ও বিক্ষোভ ক্রমেই তীব্রতর হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। লাঠিচার্জও করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের কথা ঘোষণা করেছেন।
লাদাখের প্রতিনিধিদের অভিযোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা ভুল ছিল এবং তাদের দাবিদাওয়া খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। লাদাখবাসীর বিশ্বাস প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য সরাসরি বিজেপিই দায়ী।
আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বলেছেন, দাবিদাওয়া পূরণ না হলে আন্দোলন চলবেই, তারা পিছু হটবেন না, তাদের লড়াই থামবে না। লেহের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রোমিল সিং কারফিউ ঘোষণা করেছেন। লাদাখের এই গণ-বিক্ষোভ বিজেপিকে কার্যত কোণঠাসা করে ফেলেছে। এছাড়াও ওয়াংচুক জানিয়েছেন এটি জেন-জি বিক্ষোভ, এতে কংগ্রেসের কোনো হাত নেই।
ওয়াংচুকের অনশন, দাবির মূল ভিত্তি :
লাদাখের বিশিষ্ট প্রকৌশলী ও সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক টানা ১৫ দিন ধরে অনশনে আছেন। তার শরীর ভেঙে পড়ছে। অনশনে থাকা আরও দুজন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর ছড়াতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মানুষ। তাদের প্রধান দাবি লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া এবং অঞ্চলটিকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা। ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হলে এখানকার জনজাতি সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। ওয়াংচুকের এই উদ্যোগ লাদাখের তরুণ প্রজন্মকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে।
তাদের অভিযোগ ২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পর থেকে কেন্দ্র সরকার লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দিলেও বাস্তবে উন্নয়ন বা অধিকার রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
উত্তেজনা বাড়িয়ে বিজেপি অফিসে আগুন :
দিনভর চলা উত্তেজনার মধ্যে বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লেহ কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি আশপাশের রাস্তায় ভাঙচুর চালানো হয়। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর জম্মু ও কাশ্মীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরকে একদিকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। অন্যদিকে লেহ ও কার্গিল মিলে গঠিত হয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের পর থেকেই এখানকার মানুষ পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার দাবি জানিয়ে আসছেন।
কে সোনম ওয়াংচুক? :
সোনম ওয়াংচুক শুধুমাত্র একজন পরিবেশকর্মী নন, তিনি লাদাখের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজ সংস্কারের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ (এসসিইএমওএল)।’
প্রতিষ্ঠানটি লাদাখের গ্রামীণ শিক্ষায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। তার জীবন ও কর্মকাণ্ড থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা থ্রি ইডিয়টসের মূল চরিত্রটি লেখা হয়েছিল। সিনামাটিতে আমির খানের চরিত্র ‘রেঞ্চো’ আংশিকভাবে তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই পর্দায় সামনে এসেছিল। শিক্ষা ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান।
এমবি/এসআর