আবরার ফাহাদকে নিয়ে সারজিস আলমের আবেগঘন পোস্ট
বুয়েটে ছাত্রলীগের হাতে নিহত আবরার ফাহাদের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টটি এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৭ হাজার লাইক এবং ৭৩ হাজার বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। এ প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন একটি দীর্ঘ লেখা প্রকাশ করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক: বুয়েটে ছাত্রলীগের হাতে নিহত আবরার ফাহাদের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টটি এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৭ হাজার লাইক এবং ৭৩ হাজার বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। এ প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন একটি দীর্ঘ লেখা প্রকাশ করেছেন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস আলম ফেসবুক পোস্টে বলেন, আবরারের মৃত্যু তাকে সূরা বুরুজে বর্ণিত সেই বালকের মতো অমরত্ব দিয়েছে, যে নিজের ঈমান ও সত্যের প্রতি অবিচল থেকে রাজার অহংকার ভেঙে দিয়েছিল। কুরআনের সূরা বুরুজে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, যারা ঈমানের বিনিময়ে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়েছিল, তাদের জন্য বলা হয়েছে ‘জালিকাল ফাউযুল কাবির- আর এটাই মহাসাফল্য।’
সারজিস আলম আবরারের সঙ্গে সেই ঘটনার তুলনা টেনে বলেন, আবরার ছিল একেবারে সাধারণ একজন তরুণ। কিন্তু আজ সে এক আলোকবর্তিকা। তার মৃত্যু প্রমাণ করেছে, মৃত্যু মানেই শেষ নয় বরং জালিমের হাতে নিহত হওয়া মানেই ব্যর্থতা নয়। কখনও কখনও একটি মৃত্যু পুরো জাতিকে জাগিয়ে দিতে পারে।
বুয়েটে নিহত আবরার ফাহাদের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টটা এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৭ হাজার লাইক এবং ৭৩ হাজার বার শেয়ার হয়েছে। এটা দেখে সূরাহ বুরুজের সেই বালক আর রাজার কথা মনে পড়ল। এক রাজা ছিল যে নিজেকে আল্লাহ দাবি করত। কেউ তার বিরোধিতা করলেই তাকে মেরে ফেলা হতো। এরমধ্যে এক বালক রাজাকে আল্লাহ মানতে অস্বীকার করল। রাজা নির্দেশ দিল বালককে হত্যা করার। কিন্তু এক অলৌকিক কারণে বালককে হত্যা করা যাচ্ছিল না। তাকে পাহাড় থেকে ফেলে, পানিতে ডুবিয়ে নানাভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রাজার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রতিবারই ব্যর্থ। এরপর বালক রাজাকে একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দিল। বালক বলল, আমি জানি আমাকে কীভাবে মারলে তুমি হত্যা করতে পারবে। যদি তুমি তীর নিয়ে সেটা বিসমিল্লাহ বলে ছুড়ো, তবে সেই তীরের আঘাতে আমার মৃত্যু হবে। তবে সেটা করতে হবে জনগণের সামনে। বালক জানত এতে সে মারা যাবে, কিন্তু এর মাধ্যমে তার লক্ষ্য ছিল রাজার নিজেকে আল্লাহ দাবি করার এই অহমকে মিথ্যা প্রমাণিত করা। লোক জড়ো হলো, রাজা বিসমিল্লাহ বলে তীর ছুড়ল, বালক মারা গেল। রাজা ভাবল, যাক আপদ দূর হলো।
কিন্তু এরপরেই ঘটল আসল ঘটনা।
নিজেকে আল্লাহ দাবি করা রাজা বালককে হত্যা করতে পারল না, তাকে বিসমিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর নামে তীর ছুড়তে হলো। এক আল্লাহর ইবাদাতে বিশ্বাসী বালকের মৃত্যুতে সেখানে উপস্থিত সমস্ত প্রজাদের মনে এটা গেঁথে গেল যে বালক সত্যের উপর ছিল, তাই উল্টো সবাই ঈমান এনে ফেলল। সবাই রাজাকে আল্লাহ মানতে অস্বীকার করে বসল। রাজার সেটাও সহ্য হলো না। বিশাল গর্ত খুড়ে সেখানে আগুন জ্বালানো হলো। বলা হলো যারা যারা ঈমান এনেছ তারা ঝাঁপ দাও! কী আশ্চর্য! হঠাৎ পাওয়া এই ঈমান তাদের কাছে এতটাই মূল্যবান হয়ে গেল যে, এর বিনিময়ে সবাই সেই আগুনে ঝাঁপ দিতেও পিছপা হলো না। এক মা তার দুধের বাচ্চা কোলে নিয়ে ঝাঁপ দিতে ইতস্তত করছিল, সেদিন সেই কোলের বাচ্চাও কথা বলে উঠেছিল। বলেছিল, মা আপনি এগিয়ে যান, আপনি হক্বের পথেই আছেন। কুরআনের সূরাহ বুরুজে আল্লাহ সেসব বান্দাদের কথা উল্লেখ করেছেন যারা সেদিন ঈমানের বিনিময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়েছিল। আল্লাহ এই ঘটনাকে বলেছেন—
"জালিকাল ফাউযুল কাবির—আর এটাই মহাসাফল্য।" (সূরাহ বুরুজ, ৮৫: ১১)
আল্লাহ যেন আবরারকে জান্নাতে সূরাহ বুরুজের সেই বালকের প্রতিবেশী করেন।
আবরার ফাহাদ আর দশজনের মতোই নিতান্ত একটা সাধারণ ছেলে ছিল মাত্র। কিন্তু সে আজ এক আলোকবর্তিকা। তার মৃত্যু তাকে সূরাহ বুরুজের সেই বালকের মতো অমর করে দিয়েছে।
তাই মৃত্যু মানেই শেষ নয়, জালিমের হাতে নিহত হওয়া মানেই ব্যর্থতা নয়। মাঝে মাঝে একটা মৃত্যুই একটা জাতিকে জাগিয়ে দিতে পারে। ইখলাসের সাথে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছোট একটা কাজও অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আকাশের ওপারে একটা অনিন্দ্য সুন্দর বাড়ি। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এই বাড়িটি কার? সঙ্গি ফেরেশতা জবাব দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই বাড়িটি সেই ব্যক্তির যে আল্লাহর পথে লড়াই করে নিহত হয়েছে। আমরা খুব করে চাই, আমাদের রব যেন আবরারকেও এরকম একটা বাড়ির মালিকানা দান করেন। লাল নীল হীরার বাড়ি...
এমবি এইচআর