ইসরায়েল-সমর্থক মাচাদোকে নোবেল: শান্তি পুরস্কার নাকি রাজনৈতিক স্বার্থ?
ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার পর বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। তার ইসরায়েলপন্থী অবস্থান ও মার্কিন ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।

নিজস্ব প্রতিবেদক: এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। তবে ঘোষণার পর থেকেই নোবেল কমিটি ও মাচাদো দুজনকেই ঘিরে চলছে তীব্র বিতর্ক। সমালোচকদের অভিযোগ— ইসরায়েলের গণহত্যার সমর্থক একজন নেত্রীর হাতে শান্তির প্রতীক তুলে দেওয়া নোবেল কমিটির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মাচাদোর নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ঘোষণার পর থেকেই নোবেল কমিটি সমালোচনার মুখে পড়ে। সমালোচকরা বলছেন, ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভ্যুত্থান, মার্কিন হস্তক্ষেপ সমর্থন এবং ইসরায়েলের গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা একজন ব্যক্তিকে কিভাবে ‘শান্তির প্রতীক’ হিসেবে বিবেচনা করা যায়— সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
‘কোডপিংক’-এর লাতিন আমেরিকা ক্যাম্পেইন কর্ডিনেটর ও ভেনেজুয়েলার নাগরিক মিচেলে এলনা ‘কমন ড্রিমস’-এ এক মতামতে লিখেছেন— “মারিয়ার মতো ডানপন্থীরা যখন নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতে, তখন শান্তির কোনো অর্থ থাকে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, মাচাদো ২০০২ সালে ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভ্যুত্থানে সহায়তা করেছিলেন এবং নির্বাচিত সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করেছেন। এমনকি তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলার হুমকিকেও সমর্থন করেছিলেন।
এ ছাড়া মাচাদো প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যদি কখনো তিনি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে দেশটির ইসরায়েলি দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন— যা ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চল।
এই অবস্থান থেকেই তাকে ‘জায়নবাদী নীতি অনুসারী’ বলছেন বিশ্লেষকরা।
মাচাদোর নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে সমালোচনা উঠেছে বিভিন্ন দেশ থেকেও। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, “শান্তির জন্য কিছুই করেননি এমন লোকদের হাতে নোবেল তুলে দেওয়া হচ্ছে, তাই এই পুরস্কার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।”
নরওয়ের সংসদ সদস্য বিয়র্নার মক্সনেস জানান, মাচাদো ২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন— যে পার্টি গাজায় গণহত্যার জন্য দায়ী।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম অধিকার সংগঠন সিএআইআর (CAIR) এক বিবৃতিতে বলে, “গণহত্যা সমর্থনকারীর হাতে নোবেল দেওয়া নোবেল কমিটির জন্য এক লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত।”
অনেকে বলছেন, মাচাদোকে পুরস্কৃত করে নোবেল কমিটি ‘শান্তি নয়, বরং রাজনীতির জয়’ ঘটিয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা, মস্কো টাইমস, বিবিসি
এমবি/এসআর