শান্তিচুক্তি নিয়ে দেড় বছর টালবাহানার পর নতি স্বীকার, নেতানিয়াহুর পতন কী শুরু

গাজায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি ইসরায়েলি রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তবে এই অধ্যায়ের শুরুতেই প্রশ্ন উঠেছে—প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কি রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারবেন?

Oct 9, 2025 - 16:41
 0  2
শান্তিচুক্তি নিয়ে দেড় বছর টালবাহানার পর নতি স্বীকার, নেতানিয়াহুর পতন কী শুরু
ছবি, সংগৃহিত

মেঘনাবার্তা প্রতিনিধিঃ গাজায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি ইসরায়েলি রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তবে এই অধ্যায়ের শুরুতেই প্রশ্ন উঠেছে—প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কি রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারবেন?

আল জাজিরার রাজনৈতিক বিশ্লেষক নূর ওদেহ বলেন, “এটা সবারই জানা ছিল যে ইসরায়েল নিজে থেকে এই গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধ করবে না। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর চাপেই নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন।”

ওদেহের বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ না থাকলে ইসরায়েল এই সমঝোতায় আসত না। তিনি লিখেছেন, “নেতানিয়াহু চাইলে এক-দেড় বছর আগেই শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে পারতেন। কিন্তু একরোখামি ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের কারণে তা হয়নি। বরং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে একাধিক শান্তি প্রচেষ্টা তিনি নিজেই ভেস্তে দিয়েছেন।”

ওদেহের মতে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর পুরো কৃতিত্ব এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ঝুলিতে যাচ্ছে। “সব প্রশংসা, সব কৃতজ্ঞতা এখন ট্রাম্পের দিকে, নেতানিয়াহুর দিকে নয়,”—লিখেছেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে যখন ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি সম্পন্ন হবে, তখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় মোড় আসবে। ওদেহ বলেন, “যখন জিম্মিরা মুক্তি পাবে, তখন ফের যুদ্ধে জড়ানো নেতানিয়াহুর জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।”

তবে তিনি যোগ করেন, “নেতানিয়াহু চেষ্টা করবেন যেন যুদ্ধবিরতির এই ধাপ শেষ হতেই তিনি একটি সুবিধাজনক ঘোষণা দিতে পারেন—হয় সরকার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, নয়তো আগাম নির্বাচনের ডাক দেবেন।”

গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে অনেকেই ইসরায়েলের সামরিক ব্যর্থতা নয়, বরং রাজনৈতিক চাপের ফল হিসেবে দেখছেন। দীর্ঘ দুই বছর ধরে যুদ্ধের ‘প্রয়োজনীয়তা ও নিরাপত্তা’র যুক্তি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে ছিলেন নেতানিয়াহু, কিন্তু এখন সেই ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের নিচে সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে, আর ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতা ও শান্তিতে নোবেল পাওয়ার আগ্রহ পুরো প্রেক্ষাপট পাল্টে দিয়েছে।

ওদেহের ভাষায়, “নেতানিয়াহুর সামনে এখন শুধু একটি প্রশ্ন—তিনি কি এই শান্তিচুক্তিকে নিজের বেঁচে থাকার সিঁড়ি বানাতে পারবেন, নাকি এটি হবে তার রাজনৈতিক পতনের সূচনা?”

গাজা যুদ্ধ শেষ হলেও ইসরায়েল এখন নতুন এক যুদ্ধে প্রবেশ করেছে—সেটি হচ্ছে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই।

এমবি এইচআর