অভিনয়ের জন্য প্রযোজক-পরিচালকের প্রেমিকা হওয়ার প্রয়োজন নেই

Oct 6, 2025 - 12:06
 0  4
অভিনয়ের জন্য প্রযোজক-পরিচালকের প্রেমিকা হওয়ার প্রয়োজন নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক:  অভিনয়ে দারুণ মাপকাঠি তার। চরিত্র নির্ভর যে কোনো গল্পেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে নিদারুণ অভিনয় করে যেতে পারেন। আর এমনটা ঘটে জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী রুনা খানের বেলায়। মঞ্চ থেকে নিজেকে মেলে ধরে দীর্ঘ একটা সময় পাড় করেছেন তিনি লাইট-ক্যামেরা ও অ্যাকশনে।

এখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নিয়মিত ওয়েব প্ল্যার্টফর্ম ও ফ্যাশন শো-গুলোতে বেশ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কাজটা যেমন বুঝে করেন, কথাও বলেন স্পষ্ট ভাষায়। রুনা খান এখানেই স্বকীয়। অনেক দিন ধরে কিছু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমালোচনার শিকার হচ্ছেন অভিনেত্রী।

ওজন কমানোর পণ্য বিক্রি করে, এমন বিভিন্ন পেজে আপনার মন্তব্য প্রচার করে বলা হচ্ছে, আপনি তাদের গ্রাহক। বিষয়টি আসলে কী?

২০২৩-এর শুরুর দিকে একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম।

সেখানে ওজন কমানো প্রসঙ্গে কথা বলেছিলাম। সেটারই অংশ কেটে কেটে এসব পেজে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমনভাবে এডিট করছে, যেন আমি তাদেরই গ্রাহক। অথচ তা একেবারেই মিথ্যা। বেশ কয়েকজন সহকর্মী আমাকে এগুলোর ভিডিও পাঠিয়েছে।
আসলে চারপাশে এত মিথ্যা, এত গুজব—এসব যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। নতুবা প্রতিদিন মিথ্যার উত্তর দিতে দিতে তো জীবন শেষ হয়ে যাবে! এরপর আরো একজন এ রকম ভিডিও পাঠিয়ে বিষয়টির প্রতিবাদ জানানোর পরামর্শ দেন। তাই আমার পেজে একটা পোস্ট দিয়েছি। মুশকিল হলো, আমার ওজন কমানোর জার্নি ছিল ২০২২-এ। এরপর থেকে মাত্র দুটি পত্রিকায় এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম। সেখান থেকে কমেন্ট নিয়ে প্রায় সব গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, ছবিগুলো ব্যবহার করেছে। আমার সঙ্গে বিশাল এ অন্যায়টা করেছে গণমাধ্যম। ওজন কমানোর পর দেশের প্রথম সারির অন্তত ২০ জন ফ্যাশন ডিজাইনার আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, ফটোশুট করেছে। কিন্তু সেসব ছবি গণমাধ্যমগুলো ছেপেছে এমনভাবে, যেন আমি নিজ থেকে এসব ফটোশুট করিয়েছি।

এ রকম ফ্যাশন মডেল হিসেবে দেশের আরো পাঁচজন অভিনেত্রী কাজ করছেন। ডিজাইনাররা তাঁদের পোশাকে যেসব শিল্পীকে দেখতে চান, তাঁদের নিয়েই কাজ করেন। কিন্তু কিছু অভিনেত্রী তো আছেন, যাঁদের দশ বছরে কোনো কাজ নেই, কোনো প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে ইন্টারভিউ দিতে পারেননি, তাঁরা ইনিয়ে-বিনিয়ে আমাকে কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দেন, আর সেটাকে ‘কোট’ করে গণমাধ্যম নিউজ প্রকাশ করে! অথচ একই ডিজাইনারের অন্য মডেলদের বিষয়ে এমনটা দেখা যায় না। এই অন্যায়ের ৯৫ শতাংশ দায় গণমাধ্যমের।

আপনার ওজন কমানো আর ত্বকচর্চা নিয়ে শোবিজের অনেকেও নেতিবাচক কথা বলেন... 

হ্যাঁ, এমন অনেক সহকর্মী আছেন, যাঁরা প্রতিনিয়ত আমার নামে যা-তা বলে বেড়াচ্ছেন। আমি নাকি অ্যাস্থেটিক বিউটি করিয়েছি, ওই যে ঠোঁট ফোলানো, গাল চোখা করা এসব করেছি। বাস্তবতা হলো, আমার ৯৫ শতাংশ নারী সহকর্মী এসব করেন। কিন্তু আমি কসমেটিকস সার্জারি, অ্যাস্থেটিক বিউটি, আর্টিফিশিয়ালি চেহারার পরিবর্তনের শতভাগ ঘোরবিরোধী মানুষ। আমি একজন অভিনেত্রী ও মডেল। অভিনেত্রী হিসেবে মঞ্চ, টিভি নাটক, চলচ্চিত্র ও ওটিটিতে কাজ করি; আর মডেল হিসেবে টিভিসি-ওভিসি, র‌্যাম্প এসব। ফ্যাশন মডেল হিসেবে আমি ১৫ বছর আগেও কাজ করেছি, তখন সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা অবস্থা ছিল না। এখন ক্ষেত্র বেড়ে যাওয়ায় মডেলিংয়ের ছবি নানাভাবে সামনে আসছে। আর এই ফ্যাশন মডেলিং আমার পাশাপাশি দেশের প্রথম সারির আরো পাঁচ-সাতজন সহকর্মী কাজ করছেন। তাঁদের কারোর ক্ষেত্রেই এ রকম তীর্যক সমালোচনা দেখা যায় না, যেমনটা আমার ক্ষেত্রে ঘটে।

এর কারণটা কী?

২০০৫ থেকে ২০২৫, বিশ বছর ধরে একজন পেশাদার মডেল-অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমার কাছে যেসব কাজের প্রস্তাব এসেছে, তার মধ্যে যেগুলো ভালো লেগেছে, কেবল সেটাই করেছি। অন্যদিকে গত বিশ বছরে আমার অধিকাংশ নারী সহকর্মীর ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত বিনিময়ের মাধ্যমে। পরিচালকের সঙ্গে প্রেম-বিয়ে-পরকীয়া এসবের মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ার হয়েছে। যত দিন পরিচালকের সঙ্গে প্রেম বা সম্পর্ক, তত দিন সেই পরিচালকের কাজে ওই অভিনেত্রী; সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর একটা পাসিং শটেও তাকে আর পাওয়া যায় না। এসব অসততার চর্চা করে পর্দায় তারা বোঝানোর চেষ্টা করে, লম্বা হাতার ব্লাউজ, গাঢাকা পোশাক পরা মানেই শালীনতা! অথচ তাদের বাস্তব জীবনে শালীনতার রেশমাত্র নেই। এই পুরো শ্রেণির মাথায় আগুন ধরে গেছে, সারা জীবন-যৌবন দিয়ে, পরিচালকের প্রেমিকা হয়েও তারা ক্যারিয়ার গড়তে পারল না। আর আমি কারো সঙ্গে প্রেম-পরকীয়া ছাড়া যোগ্যতা দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলাম। এটা সহ্য করতে না পেরে বলা হচ্ছে, আমার পোশাক অশালীন। কাপড়ের আবার অশালীনতা কী? অশালীন তো হয় কর্ম। বিশেষ করে আমাদের নাটকের অভিনেত্রীদের বেশির ভাগের জীবন চূড়ান্ত অশালীন কর্মকাণ্ডে ভরা, আর পর্দায় শরীর-ঢাকা কাপড় পরে তাঁরা শালীনতা প্রতিষ্ঠা করেন! পোশাকের কোনো শালীনতা-অশালীনতা হয় না। বোরকা যেমন পোশাক, সুইমস্যুটও পোশাক, যার যেটা ভালো লাগবে, পরবে। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, এটা আমাদের সমাজে যায় না। কিন্তু পরিচালকের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিনিময়ের মাধ্যমে কাজ করা পৃথিবীর কোন সমাজে গ্রহণযোগ্য? দেখুন, কার স্কিন কে কতখানি দেখাবে, সেটা তাঁর ব্যাপার। আর স্কিন কি রুনা খানই প্রথম দেখিয়েছে? আমি তো শাবানা আপাকেও ক্লিভেজ দেখিয়ে নাচতে দেখেছি। আমি সিনেমা দেখা মানুষ ভাই; পর্দায় শাবনূর, মৌসুমী, শাবনাজ আপা প্রত্যেকের ক্লিভেজ দেখেছি। তাহলে কি ২০-২৫ বছর বয়সে দেখানো যাবে, আর আমার ৪০ বছর বলে দেখানো যাবে না? কিন্তু এই দেশে তো ৫০-এর অভিনেত্রীও দেখাচ্ছেন। তাহলে? এই দৃষ্টিভঙ্গিটা কারা তৈরি করছেন? যাঁরা ব্যক্তিগত জীবনে অশালীনতার চর্চা করে পর্দার পোশাক দিয়ে শালীনতার কথা বলেন।

ওজন বা চেহারার জন্য কৃত্রিম উপায় ব্যবহার করেননি, এ নিয়ে বলতে হচ্ছে কেন? এই কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি?

আমার নামে এসব মিথ্যা কথা অনবরত ছড়ানো হচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে আজ বলছি। একটা মিথ্যা বছরের পর বছর চলতে থাকলে সেটাকে মানুষ সত্য ভেবে নেয়। একটা বিষয় আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জীবনে কোনো দিন কৃত্রিমভাবে চেহারা পরিবর্তনের চেষ্টা করিনি। আমি তো এই দলের মানুষ না। আমি একলা পথিক, আমি রাজা। রাজা কখনো ভেড়ার পাল নিয়ে চলে না। বাংলাদেশে আমার চেয়ে জনপ্রিয়, সুন্দরী অভিনেত্রী বহুত আছে। কিন্তু বাংলাদেশে আমার মতো শঠতাবিহীন, সৎ অভিনেত্রী একজনও নেই; যে বিশ্বাস করে অভিনেতা হওয়ার জন্য শুধু অভিনয়টুকুই জানা লাগে। আমি অভিনয় করতে এসেছি, ভালোলাগা থেকে। বিশ বছর এখানে কাটানোর পর উপলব্ধি করেছি, অভিনয় আমার ভালোবাসা, আমার প্রথম প্রেম। রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া, সরকারি প্লট বাগিয়ে নেওয়া, আখের গুছিয়ে উন্নত দেশে পাড়ি জমানোর চিন্তা নিয়ে অভিনয়ে আসিনি। আমার অধিকাংশ নারী সহকর্মীরা ব্যক্তিজীবনে চরম কদর্যতার চর্চা করে পর্দায় লম্বা পোশাককে শালীনতা বলে প্রতিষ্ঠা করেন, এরপর উড়াল দেন আমেরিকায়। কেন? তাঁদের তো সৌদি আরবে যাওয়া উচিত। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় তো অশালীন পোশাকের ছড়াছড়ি। সত্যি বলতে, বাংলাদেশে শিল্পী নেই, আছে শিল্প ব্যবসায়ী। এরা শিল্প বিক্রি করে পয়সা কামানোর জন্য। এরপর চলে যায় বিদেশে।

এসব নিন্দা, নেতিবাচক আক্রমণ আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলে?

গত চার বছরে আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় ৯৫ শতাংশ ছবি কাজ সম্পর্কিত। শুধুই ব্যক্তিগত জীবনের ছবি বড়জোর ৫ শতাংশ। সত্যি বলতে, আমি এই দেশে গোবরে পদ্মফুল। আমি যা বিশ্বাস করি, চর্চা করি, আশপাশের কাউকে সেটা চর্চা করতে দেখি না। আমার আশপাশের অধিকাংশকে আলোচনায় থাকতে দেখি ব্যক্তিজীবন, স্বামী-সন্তান-সংসার এসব নিয়ে। আর আমি আলোচনায় থাকি আমার কাজ দিয়ে। আমার প্রত্যেকটি ফটোশুট পেশাগত কাজ। অনেস্টলি স্পিকিং, দর্শকদের নিয়ে আমি চিন্তা করি না। আমার দর্শক আমি তৈরি করব। তাদের সঙ্গে আমার কাজ দিয়ে যোগাযোগ হবে। আমি বিরক্ত চারপাশের ভণ্ড সহকর্মী ও হলুদ সাংবাদিকতার ওপর। দেখুন, আমি স্পষ্টভাবে জানি, কী করছি, কী করতে চাই। যত দিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকব, অভিনয় আর মডেলিংই করে যাব। অভিনেত্রী হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের চামচামি করতে হয় না, অভিনয়ের জন্য প্রযোজক-পরিচালকের প্রেমিকা হওয়ার প্রয়োজনও নেই। অভিনেতার কাজ অভিনয় করা, সে বাড়িতে বসে থাকবে, তার কাছে কাজের প্রস্তাব আসবে, পছন্দ হলে সেটা করবে। ব্যস। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।

হ্যাঁ, প্লিজ...

গত চার বছরে ওজন কমানোর অনেক পণ্য, কসমেটিক সার্জারির বিভিন্ন কম্পানির প্রচারণার প্রস্তাব পেয়েছি, তা অবিশ্বাস্য। লাখ লাখ টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ আমি এসবে বিশ্বাস করি না। ধরুন, আমি যদি র‌্যাম্পে হাঁটার জন্য এক টাকা পাই, ওই সব পণ্যের প্রচারের জন্য আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ১০০ টাকা! পার্থক্যটা ভেবে দেখুন। আমি ১০০ টাকা ফিরিয়ে দিয়ে এক টাকার কাজ করেছি, এসবের এতটাই বিরোধী আমি। সুতরাং আমার নামে মিথ্যা বলে লাভ নেই।

এবার একটু কাজের প্রসঙ্গে আসি। আপনার অভিনীত প্রায় দেড় যুগ আগের ঊনাদিত্য ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। এমন বিরল বিলম্বের কারণ কী?

সে সময়ের তিনটি ছবি এ রকম আটকে আছে। ২০০৮ সালে ‘ঊনাদিত্য’ বানানো হয়েছিল বিভিন্ন উৎসবে পাঠানোর উদ্দেশ্যে। ওই বছর ভারতের গোয়া চলচ্চিত্র উৎসবে একটি পুরস্কারও পায়। আর ডিজিটাল প্রিন্টে বানানোর কারণে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। এর মধ্যে আবার ছবিটির প্রিন্ট চুরি হয়ে যায়। এরপর অনেক চেষ্টায় সেটা উদ্ধার করে এখন সংস্কার করে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সেই ২০০৮-এ আমি আশীষ খন্দকারের একটি ছবি করেছিলাম-’বাথান’, ওটাও মুক্তি পায়নি। এনামুল করিম নির্ঝরের ‘নমুনা’ও ওই বছর করেছিলাম, কিন্তু মুক্তি পায়নি।

এমবি/এসআর