সাদাপাথরের পর এবার যাদুকাটা নদীর বালু লু’ট; থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন

অবৈধ বালু উত্তোলন ও অনিয়ন্ত্রিত স্থলচর সংস্কারের ফলে যাদুকাটা নদীর তীরে বেড়েই চলেছে ক্ষয়ক্ষতি; স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও পানিসম্পদ সংকটের মুখে।

Oct 12, 2025 - 11:36
 0  2
সাদাপাথরের পর এবার যাদুকাটা নদীর বালু লু’ট; থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন

মেঘনাবার্তা প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও আশপাশের সুন্দর্যক্ষেত্রে অবৈধ বালু উত্তোলন এবং অনিয়ন্ত্রিত সরকারের অনুমোদনবিহীন স্থলচর কেটে নেওয়ার ধারা নতুন করে প্রকৃতির রূপ নষ্ট করে চলেছে—এই অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের ও পরিবেশবিদদের পক্ষ থেকে। কয়েক মাসে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তুলনা করা যায় কেবল সাদাপাথর এলাকার ধ্বংসের সঙ্গে, অভিযোগ করে স্থানীয়রা বলেন।

স্থানীয় এক সংবাদদাতা জানায়, “গত কয়েক মাসে নদীর কোল ঘেঁষে বিশাল বিশাল ব্যারান স্থলচর গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিন ভোরে মাঝরাত পর্যন্ত ট্রাক-ট্রাক বালু যান—নদীর ধারা বদলে যাচ্ছে, পাকা পথ ধসে পড়ছে, এবং মাছাবাহিরের স্রোত কেটে পড়ে।” (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক)

পরিবেশ ও নদী ব্যবস্থাপনার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন— যাদুকাটা নদীর মায়াময় চর ও তীরভূমি গ্রামের অল্পদিনের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে পারে। অবৈধ বালু উত্তোলন তীর রক্ষা ভেঙে দিচ্ছে, নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে এবং প্রবাহ কমে গেলে জলাবদ্ধতা ও কৃষিজমির অপচয় বাড়বে।

কী ঘটছে — দ্রুত সংক্ষিপ্ত বিবরণ

  • অবৈধ বালু উত্তোলন: স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিজার্ভ বা অনুমোদনবিহীন জায়গা থেকে বড় পরিসরে বালু তোলা হচ্ছে—এতে নদীর তলদেশ পাতলা হয়ে নদী খনন হচ্ছে।

  • স্থলচর কর্তন ও পুনর্সংস্কার: স্থলচর কেটে সেখানে নতুন উপকূল নির্ণয় ও দখলদারিত্ব গড়ে তোলা হচ্ছে; এতে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ও চরপ্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

  • অর্থনৈতিক চাপ: বালু ব্যবসায়ীদের দ্রুত অর্থ উপার্জনের লোভ, স্থানীয় দারিদ্র্য এবং তদারকির অভাব—এসব মিলিয়ে অপরিকল্পিত কার্যক্রম বাড়ছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের অবস্থান

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে মঙ্গলবার এক প্রশ্নের মুখে স্থানীয় কর্মকর্তা অনস্বীকার্য বললেন যে, কিছু রিপোর্ট তাদের কাছে এসেছে এবং তারা গিয়ে বিষয়টি যাচাই করছে। তবে স্থলচর কর্তন ও বালু উত্তোলনে গড়ে ওঠা কিছু অবকাঠামোর বিরুদ্ধে এখনও শক্ত পদক্ষেপের অনুপস্থিতি রয়েছে।

এক কর্মকর্তা (নাম গোপন রাখা হয়েছে) বলেন, “আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছি; স্থানীয় প্রশাসনিক তৎপরতা ও জেলাপ্রশাসনের সমন্বয় দরকার।”

মৎস্যজীবী, কৃষক ও পরিবেশভিত্তিক জীবনাবলম্বী পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাছ শিকার কমে যাওয়ায় মাছ ধরার মানুষদের আয় হ্রাস পাচ্ছে; বন্যপ্রাণীর বিচরণহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলগামী শিশুদের স্কুল পর্যন্ত যাওয়ার পথও ধসে পড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, “যদি এখনি বিরতি না দেয়া হয়, আগামী কয়েক বছরে এই এলাকায় জলা-জঙ্গল, চর ও তীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যাবে—ফলে বন্যা, মাটির ক্ষয়, জমির উর্বরতা হারিয়ে যাবে।”

স্থানীয় গ্রামীণ সমাজকল্যাণ সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই অবস্থান নিয়েছে এবং দ্রুত সময়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। তারা দাবি করেছেন— অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হোক।

সাদাপাথরের পর যাদুকাটার বালু লু’ট—এই শব্দটি এখন সুনামগঞ্জের পরিবেশপ্রেমী ও স্থানীয়দের মধ্যে ভয় জাগাচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় যদি দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তাহলে নদী-চর-জলা-জঙ্গলের এই জোড়া ধ্বংস স্থানীয় জীবজগত ও অর্থনীতিকে দীর্ঘদিন আক্রান্ত করবে।

এমবি/এসআর