রাজশাহীতে বরখাস্ত এক ডিবির এসআইকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ
চাঁদাবজির অভিযোগে করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই এসআই চাকরিচ্যুত হন, এরপর তিনি আত্মগোপনে ছিলেন

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহীতে বরখাস্ত হওয়া গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে নগরীর হজোর মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার সাবেক এই এসআইয়ের নাম মাহবুব হাসান (৩৫)। মারধরের ফলে হাসান রক্তাক্ত হয়েছেন। তার মাথায় জখম দেখা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের হজোর মোড় এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে মাহবুব হাসানকে বের করে মারধর করেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাকে চন্দ্রিমা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ডিবির এসআই ছিলেন মাহবুব হাসান। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এর মধ্যে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে করা মামলাও রয়েছে। নগরের গোরহাঙ্গা এলাকার ব্যবসায়ী মাসুদ রানা সরকার গত বছরের ২২ আগস্ট মামলাটি করেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর তিনি চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
জানা গেছে, হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পড়াশোনা করতেন। ২০১৩ সালে এসআই হিসেবে তিনি নিয়োগ পান। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় যোন দেন। পরে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) যোগদান করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগ করতেন হাসান। পরবর্তীতে দলীয় প্রভাবে পুলিশে চাকরি নেন এবং ডিবিতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন চালান। হাসান রাজশাহীতে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে জখম ও পঙ্গু করেছেন।
শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষকেও চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। এর মাধ্যমে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেন বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। রাজশাহীর রেলগেট এলাকার রাজিব আলী রাতুল ছিলেন এমন এক ভুক্তভোগী। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাতুলের বাবা মাসুদ রানা হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তৎকালীন এসআই মাহবুব হাসান সাদা পোশাকে মাসুদ রানার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে রাজীব আলীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে শিমলা বাগানে তুলে নিয়ে যান। এরপর মাসুদ রানাকে ফোন করে জানানো হয়, তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে রাজীবকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। এরপর ওই পরিমাণ টাকা হাসানের হাতে দেওয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়, এ সময় হাসান আশ্বাস দেন, রাজীবকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু পরদিন তাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ মামলায় দীর্ঘ ১৬ মাস কারাভোগ করেন রাজীব। জামিন পাওয়ার পর এসআই হাসানের সঙ্গে দেখা হলে রাজীব টাকা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন হাসান ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং হুমকি দেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করেছেন, টাকা চাইলে এবার মেরেই ফেলা হবে।
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ জানান, “আটকের পর হাসানকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমাদের থানায় তার নামে মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের কাছে হাসপাতালেই হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে।”
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “হাসানের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির মামলা আছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে অন্য কোনো মামলায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সেটিতেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান জানান, মাহবুব হাসান সর্বশেষ নগর ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। তারপরই তিনি বরখাস্ত হয়েছেন। তার বিষয়ে তিনি বিস্তারিত এখনও জানেন না।
এমবি/টিআই