ক্রমাগত অনিশ্চয়তা বাড়ছে নির্বাচন নিয়ে

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় অচলাবস্থায় পড়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রচেষ্টা।

Oct 10, 2025 - 12:23
 0  3
ক্রমাগত অনিশ্চয়তা বাড়ছে নির্বাচন নিয়ে
ছবি-সংগৃহিত

মেঘনাবার্তা প্রতিনিধিঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় অচলাবস্থায় পড়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রচেষ্টা। প্রায় এক বছর আলোচনা চলার পরও বৃহস্পতিবার রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত কমিশনের শেষ বৈঠক শেষ হয় কোনো সমাধান ছাড়াই।

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনড় অবস্থানের কারণে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। কমিশন জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও দলগুলোর মতামত মিলিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে।

দুই ভাগে বিভক্ত রাজনৈতিক অবস্থান

বিএনপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে থাকলেও, জামায়াত ও এনসিপিসহ কিছু দল নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে। গণভোটের প্রশ্ন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব কীভাবে কার্যকর হবে—এসব বিষয়ে কোনো ঐক্য হয়নি। ফলে জুলাই সনদ এখনো ঝুলে আছে।

প্রশাসনিক অচলাবস্থা

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনিক প্রস্তুতি প্রায় শূন্য। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিববিহীন, মাঠ প্রশাসনে আতঙ্ক ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। নির্বাচনের জন্য মাঠ পর্যায়ে ফিট লিস্ট প্রস্তুত বা কেন্দ্র সাজানোর কাজ এখনো শুরু হয়নি।

নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংকট

পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান, হত্যা ও অপহরণের ঘটনা বেড়ে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। সীমান্তে আরাকান আর্মির তৎপরতা নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এর সঙ্গে চলছে সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, যা নির্বাচনপূর্ব স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এনসিপির রহস্যময় ভূমিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নানা ইস্যুতে অবস্থান পরিবর্তন করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের বিষয়ে তারা প্রথমে নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটে রাজি থাকলেও, পরে অবস্থান বদলে আগে গণভোটের দাবি তোলে। দলের প্রতীক নিয়ে জটিলতাও এখন নির্বাচনী আলোচনার নতুন কেন্দ্রবিন্দু। এনসিপি এখন পর্যন্ত ‘শাপলা’ প্রতীকে অনড়।

আন্তর্জাতিক চাপ ও জনআকাঙ্ক্ষা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ স্পষ্ট করেছে—অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনই টেকসই গণতন্ত্রের ভিত্তি। এ অবস্থানকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিনটি নরডিক দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নিষিদ্ধ দলের নেতাদের বৈঠক নিয়েও তোলপাড় চলছে।

অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বাড়তি সহিংসতা ও প্রশাসনিক অস্থিরতা মিলিয়ে নির্বাচনের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তবু দেশের মানুষ একটি অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংলাপ ও সমঝোতায় না ফিরলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন শুধু অনিশ্চিতই নয়, বরং জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকিও হয়ে উঠতে পারে।

এমবি এইচআর