‘গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধে’ হেফাজতে ১৫ সেনা কর্মকর্তা

মেঘনাবার্তা প্রতিনিধিঃ গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রেক্ষিতে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংবিধানস্বীকৃত সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের প্রতি সেই শ্রদ্ধা থেকেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কর্মকর্তাদের হেফাজতে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান জানান, তিনটি মামলায় মোট ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে—এর মধ্যে কর্মরত আছেন ১৫ জন, অবসরে ৯ জন এবং এলপিআরে আছেন ১ জন। তাঁদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ, আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁর অবস্থান শনাক্তে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর রয়েছে।
তিনি আরও জানান, “আমরা এখনো কোনো চার্জশিটের কপি বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হাতে পাইনি। আইনের ব্যাখ্যা পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সেনাপ্রধান স্পষ্ট করে বলেছেন—‘No compromise with Insaaf’ (ন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপস নয়)।”
অভিযোগের প্রেক্ষাপট
আইসিটি থেকে সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। প্রথম মামলায় র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনের অভিযোগে ১৭ জন এবং দ্বিতীয় মামলায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) নির্যাতনের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং ডিজিএফআইয়ের পাঁচজন সাবেক মহাপরিচালকও রয়েছেন।
সেনাবাহিনীর অবস্থান
অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অধিকাংশই অভিযোগের সময় ডিজিএফআই ও র্যাবের দায়িত্বে ছিলেন। র্যাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং ডিজিএফআই বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন। সেনা সদর জানায়, যেহেতু তাঁরা ইউনিফর্মধারী সেনা কর্মকর্তা, তাই তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে।
সাবেক কর্মকর্তারা সেনা আইনের আওতায় না পড়লেও চাইলে তাঁরা স্বেচ্ছায় হেফাজতে আসতে পারেন বা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন বলেও জানান মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান।
সেনাপ্রধানের বার্তা
সেনাপ্রধানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “আমরা সব সময় ন্যায়ের পক্ষে থাকব, এমনকি যদি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করতে হয় তবুও ইনসাফে কোনো আপস হবে না।”
সূত্র: ঢাকা সেনানিবাস সংবাদ সম্মেলন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
এমবি/এসআর