সবখান থেকেই চাঁদার ভাগ পান মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারিদের সঙ্গে আঁতাত ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, থানাটিতে আইন নয়, টাকাই এখন বিচার নির্ধারণ করছে।
গত বছরের নভেম্বরে মোহাম্মদপুরের বুড়িগঙ্গা পাম্পে সেনাসদস্যদের অভিযানে ম্যানেজারের কক্ষ থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও দুজনকে আটক করা হয়। সেনাবাহিনী পাম্পের মালিক শামিম বেপারিকে প্রধান আসামি করে মামলা করার নির্দেশ দেয় থানাকে। কিন্তু ওসি আলী ইফতেখার হাসান সেনা কর্মকর্তাদের জানিয়ে তাকে আসামি না করে মামলা করেন। অভিযোগ রয়েছে, মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিনিময়ে শামিম বেপারির কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন ওসি।
তদন্তে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর থানায় মামলা ও তদন্ত কার্যক্রমে অনিয়ম নিয়মিত ঘটনা। অভিযানে জব্দ করা মাদক মামলার নথি গায়েব হয়ে যাওয়া, পুরোনো মামলায় আসামিদের চালান করা, এমনকি হাতেনাতে আটক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, রাত ১১টার পর দোকান খোলা রাখলে থানা পুলিশকে দিতে হয় মাসোহারা। মাসোহারা না দিলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গত ৬ মে রাতে জেনেভা ক্যাম্প থেকে ১০ লাখ টাকার হেরোইনসহ এক ব্যক্তিকে আটক করা হলেও মামলার নথি পরে রহস্যজনকভাবে বাতিল করা হয়। পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওসির নির্দেশেই মামলাটি বন্ধ করা হয়।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা সৈয়দপুরিয়া বাবুকে বাসা থেকে ডেকে এনে থানায় নিয়ে ১০০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে মামলা করার অভিযোগও রয়েছে। তার পরিবারের দাবি, পুলিশ টাকা দাবি করেছিল, দিতে না পারায় মাদক মামলা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওসি আলী ইফতেখার হাসান চারজন এসআই ও একজন পরিদর্শক নিয়ে একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। এই সিন্ডিকেট ঠিক করে কে গ্রেপ্তার হবে, কে মুক্তি পাবে, কার বিরুদ্ধে মামলা হবে। থানার আওতাধীন হোটেল, বাজার, ফুটপাত ও দোকান থেকে প্রতিদিন নিয়মিত চাঁদা তোলা হয় এবং সেই টাকা বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে ওসির কাছে পৌঁছায়।
অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেল ও চুয়া সেলিম নিয়মিত পুলিশি সুরক্ষা পান। তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হয়।
সেনাবাহিনীর হাতে আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী এজাজকেও বিপুল অর্থের বিনিময়ে ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় চালান দেওয়া হয়, যাতে সে সহজে জামিন পেয়ে যায়। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশের হাতে ফের গ্রেপ্তার হয়ে সে মারা যায়।
স্থানীয় সূত্র বলছে, ডিএমপির প্রশাসন শাখার এক অতিরিক্ত কমিশনারের প্রভাবেই বহাল তবিয়তে আছেন ওসি আলী ইফতেখার। তার নির্দেশেই কোনো তদন্ত ছাড়াই পরিদর্শক তদন্ত হাফিজুর রহমানকে ক্লোজ করা হয়, যিনি ওসির অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
ওসি আলী ইফতেখার হাসানের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। ডিএমপি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তদন্ত শেষ হলে দোষ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদপুর থানা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ চরমে উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, থানাটিতে এখন ন্যায়বিচারের জায়গা দখল করেছে প্রভাব, অর্থ আর সিন্ডিকেটের ক্ষমতা।
এমবি/এসআর