মৃত্যুর আগের দিন; সামিরা ঢুকেই দেখেন ডাবিং রুমে সালমান-শাবনূরের হাসিঠাট্টা
মেঘনাবার্তা প্রতিনিধি: চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর আদালতের নির্দেশে নতুন করে হত্যা মামলা করা হয়েছে, যেখানে অভিযুক্ত হয়েছেন তার স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জন। ঢালিউডের এই কিংবদন্তি নায়কের অকালমৃত্যু আজও রয়ে গেছে রহস্যে ঘেরা। তবে মৃত্যুর আগের দিনটি নিয়ে এখন নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
স্মৃতিচারণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার দিনটিতে সালমান শাহ ব্যস্ত ছিলেন তার নতুন ছবি ‘প্রেম পিয়াসী’–এর ডাবিং কাজে। তিনি ছিলেন এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে, সঙ্গে সহ–অভিনেত্রী শাবনূর। পুরো সেটজুড়ে ছিল হাসি–ঠাট্টা আর খুনসুটির পরিবেশ।
দুপুরের দিকে সালমান ফোন করে বাবাকে বলেন, স্ত্রী সামিরাকে যেন নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামিরা এফডিসিতে পৌঁছান। কিন্তু রুমে ঢুকেই যা দেখলেন, সেটাই হয়তো পাল্টে দেয় সম্পর্কের গতিপথ।
সাক্ষীদের ভাষ্য, সামিরা ঢুকেই দেখেন সালমান ও শাবনূর ডাবিং রুমে হাসিঠাট্টা করছেন। এর আগেও এই দুজনকে নিয়ে মিডিয়ায় নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, যা সামিরার মনে ক্ষোভ তৈরি করেছিল। তিনি মুহূর্তেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, এবং কিছুক্ষণ পরেই দ্রুত এফডিসি ত্যাগ করেন।
সালমানের বাবা তখন ফিরে যান, কিন্তু উত্তেজনা তখনও প্রশমিত হয়নি। সামিরা গাড়িতে উঠলে সালমান ও পরিচালক বাদল খন্দকারও গাড়িতে যোগ দেন। পুরো পথজুড়ে নীরবতা। বাদল খন্দকারের শত চেষ্টা সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
এফডিসির গেটের সামনে এসে সালমান গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। কিছুক্ষণ বাদল খন্দকারের সঙ্গে আড্ডা দেন, তারপর আবার ফিরে যান ডাবিং রুমে, কিন্তু সেদিন আর কোনো কাজ হয়নি।
সেই রাতেই—রাত ১১টার দিকে, বাদল খন্দকার সালমান শাহকে তার নিউ ইস্কাটন রোডের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেন। সেটিই ছিল সালমানকে জীবিত দেখার শেষ মুহূর্ত। পরদিন সকালেই ছড়িয়ে পড়ে তার মৃত্যুর খবর, কাঁপিয়ে তোলে পুরো বাংলাদেশ।
ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে সালমান ছিলেন প্রবল মানসিক চাপে। পারিবারিক টানাপোড়েন, প্রযোজকদের সঙ্গে বিরোধ, এমনকি শিল্পী সমিতির নিষেধাজ্ঞাও তাকে গভীরভাবে ভেঙে দিয়েছিল।
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ঢালিউডে ইতিহাস গড়েছিলেন সালমান শাহ। মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরও তার রহস্যময় মৃত্যু আজও একইভাবে আলোচিত, আর নতুন মামলার পর আবারও প্রশ্ন উঠছে—এটা কি সত্যিই আত্মহত্যা, নাকি পরিকল্পিত হত্যা?
এমবি/এসআর
