ডাকসু প্রার্থীদের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ‘অচল করার’ অভিযোগ ছাত্রদল-শিবিরের

শিক্ষার্থীদের ব্যালটের মাধ্যমে এর জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রদলের প্রার্থীরা।

Sep 8, 2025 - 15:42
 0  2
ডাকসু প্রার্থীদের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ‘অচল করার’ অভিযোগ ছাত্রদল-শিবিরের
ছবি-সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির প্যানেলের কয়েকজন প্রার্থীর ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ‘সাইবার হামলায় অচল করে দেওয়ার’ অভিযোগ করেছে সংগঠন দুটি।

সোমবার মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল তাদের প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এবং জিএস পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ‘ডিজঅ্যাবল’ করে দেওয়ার অভিযোগ করে।

তবে বেলা দেড়টার দিকে শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলন চলার সময় হামিমের আইডি সচল দেখা যায়। তার আগে ওই আইডি থেকে সর্বশেষ ১২টা ৩০ মিনিটে একটি পোস্ট করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে হামিম বলেন, “আজ সকাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের আইডিটি সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৯টায় ডিজঅ্যাবল করে দেওয়া হয়। বারংবার তিনি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছেন। তার আইডি ভেরিফায়েড হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো পুনরুদ্ধার করতে পারেননি।

“একইভাবে, আমি জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম, আমার আইডিটি সাড়ে ১১টার দিকে ডিজঅ্যাবল করা হয় সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে। বারংবার চেষ্টা করছি কিন্তু পুনরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না। একবার পুনরুদ্ধার হয় আবার লক হয়ে যায়।”

ছাত্রদল প্যানেলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদের আইডিও একইরকমভাবে বিভিন্নবার ‘ডিজঅ্যাবলড হচ্ছে’ বলে দাবি করেন হামিম।

তিনি বলেন, “একটি গোষ্ঠী, যারা আগামীকাল নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে, যারা জনপ্রিয় নেতা রয়েছে, শিক্ষার্থীরা যাদের পাশে রয়েছে, তাদের ভয়ে শঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন সাইবার অ্যাটাক দিচ্ছে।

“সাইবার অ্যাটাক তারা দিতেই পারে, ভালো কথা। আমি আপনাদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাব, যারা সাইবার অ্যাটাক দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা আগামীকালকে ব্যালট অ্যাটাক দেবেন। সাইবার অ্যাটাকের বিরুদ্ধে আমাদের শিক্ষার্থীরা আগামীকাল ব্যালট অ্যাটাক দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

নিজের অ্যাকাউন্ট ‘অচল’ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদ বলেন, “সাড়ে ৯টার দিকে ঘুম থেকে উঠে আমি যখন প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম, আমি বাসা থেকে বের হব। ঠিক ওই মুহূর্তে আমি দেখতে পেলাম আমার আইডি নাই হয়ে গেছে। ডিজঅ্যাবলড হয়ে গেছে। আমি বিভিন্ন প্রমাণাদির মধ্য দিয়ে ইনস্ট্যান্ট আপিল করে প্রাথমিকভাবে আমি আমার আইডি নিয়ে আসছিলাম প্রথমবার।

“প্রথমবার যখন আমি দেখলাম ব্ল্যাংক দেখাচ্ছিল। এর পরবর্তীতে আইডি উদ্ধারের পরে আমি আমার ফেইসবুক প্রোফাইলে একটা পোস্ট করেছিলাম যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশকে সচেতন থাকবার জন্য। ঠিক এই পোস্টের ৫৬-৫৭ মিনিট পর আবারও একইভাবে আমার আইডি ডিজঅ্যাবল করে দেওয়া হয়। আপিল করে রেখেছি প্রমাণাদি। আমি জানি না আইডি আর নির্বাচনের আগে ফিরে পাব কি না।”

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনে ছোট থেকে আজ পর্যন্ত যে লেভেলে এসেছি, সে পর্যন্ত কোনোদিন কাউকে পেছন দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করিনি। আমরা যোগ্যতার বিপরীতে যোগ্যতা দিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেছি।

“অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুস্থ সংস্কৃতি দিয়ে লড়াই করার চেষ্টা চালিয়ে গেছি। আজ আমরা দেখতে পেলাম, নির্বাচনের আগের দিন রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে আমাদেরকে সাইবার অ্যাটাক করে আমাদের আইডিগুলোকে ডিজঅ্যাবল করে দেওয়া হচ্ছে।”

৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির’ বিরুদ্ধে লড়াই করে যাওয়ার দাবি করে ছাত্রদল নেতা আবিদ বলেন, “আমরা একটা অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধেই ক্যাম্পাসে লড়াই চালিয়ে গিয়েছি, যারা শিক্ষার্থীদের মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না, যারা শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশকে ভয় পায়।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, যারা এ অন্যায় পথকে বেছে নিয়েছে, যারা এ প্রপাগান্ডাকে বেছে নিয়েছে, রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে সাইবার বুলিং করে মোকাবেলা করতে চায়, প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ, আগামীকাল ৯ সেপ্টেম্বর ব্যালটের মধ্য দিয়ে তার জবাব ইনশাআল্লাহ আপনারা দেবেন।”

ভোটের আগে আইডি ফেরত পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে– এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে আবিদ বলেন, “আপনাদের মধ্য দিয়ে গোটা জাতিকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহ্বান করতে চাই, আগামীকাল আমাদের প্রত্যেককে নেতৃত্ব দিতে হবে।

“নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব পালন। এই রাষ্ট্রের ক্রুশাল মোমেন্টে প্রার্থী হিসেবে আমরা দায়িত্ব পালন করব। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আপনারাও দায়িত্ব পালন করবেন।”

এদিকে ভোটের আগের দিন একই অভিযোগ করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবির পন্যালের প্রার্থীরা।

এই প্যানেলের গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন বলেছেন, “আমার ফেইসবুক আইডি সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থীর আইডিতেও ক্রমাগত সাইবার অ্যাটাক হচ্ছে।”

ছাত্রশিবিরের জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদের অভিযোগ, “আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের আইডিগুলোতে ক্রমাগত সাইবার অ্যাটাক করা হচ্ছে। কয়েকজন প্রার্থীর আইডি অলরেডি সাসপেন্ডেড। বেশ কিছু আইডি একটু পরপরই লগআউট হয়ে যাচ্ছে।”

ফরহাদ কাছে দাবি করেন, তাদের ভিপি পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম, ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী আরমান হোসেন এবং প্রকাশনা সম্পাদক সাজ্জাদ খাঁনের আইডি ইতোমধ্যে ‘হ্যাক করা হয়েছে’।

তার অভিযোগ, “একটা গ্রুপ ডাকসু বানচালের চেষ্টা করছে। তারা ইতোমধ্যে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও অন্যান্য প্রার্থীদের আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি এটা পতিত ফ্যাসিস্টেট কাজ।”

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমাও অভিযোগ করেছেন, রোববার রাত থেকে তার আইডিতে ‘প্রচুর পরিমাণে রিপোর্ট মারা হচ্ছে’।

এক পোস্টে তিনি বলেন, “অনেক প্রার্থীর আইডি অলরেডি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। হল সংসদ কিংবা সেন্ট্রাল, যাদেরই প্রতিপক্ষ মনে করা হচ্ছে, তাদেরকে এভাবে রিপোর্ট মারা হচ্ছে।

“ডাকসুর শুরু থেকেই আমার আইডিতে রিপোর্ট মেরে রিচ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আইডিটাও গায়েব করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

উমামা ফাতেমা বলেন, “এসব কারা করছেন ও কেন করছেন তা আমরা সবাই জানি। আপনারা নেতৃত্বে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে কেমন নিরাপদ থাকবে, ভিন্নমতের মানুষেরা কীভাবে মত প্রকাশ করবে তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছে।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক সচেতন। এভাবে নোংরামি করে আর যাই হোক, ভোটে জেতা যাবে না।”

এমবি এইচআর