বিএনপি ও আ. লীগ নেতাসহ ছয় জেলায় ৯ জনকে হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনায় বিএনপি নেতা, যশোরে আওয়ামী লীগ নেতা, রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে এক তরুণসহ ছয় জেলায় ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকে তিন শ্রমিকের লাশ, নরসিংদীর মনোহরদীতে আরো এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কালের কণ্ঠের সংশ্লিষ্ট অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
ঢাকা : মোহাম্মদপুরে ছিনতাইকারী সন্দেহে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নেত্রকোনা : সদর উপজেলার মৌগাতী ইউনিয়নে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে হামলা-পাল্টাহামলায় সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতাসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
যশোর : মণিরামপুর উপজেলায় চায়ের দোকানে বসে কথা বলার সময় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আশরাফুল ইসলাম (৪০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় রাজগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আশরাফুল ইসলাম মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সীমান্ত পরিবহন বাস কম্পানির কাউন্টারে স্টাফ হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত এসে আশরাফুলের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। ছুরির একাধিক আঘাতে তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। আশরাফুলকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন তারেক গাজী।
কুমিল্লা : নগরে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে মহরম হোসেন (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাতে কাটাবিল মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মহরম মুরাদপুর এলাকার চারু মিয়ার ছেলে। তিনি শ্বশুরবাড়ি কাটাবিল এলাকায় ভাড়া থাকতেন। নিহতের বোন মামলা করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপু হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অপু নগরীর কাটাবিল এলাকার মৃত শাহজান মিয়ার ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়া সদর দক্ষিণে ঘরের মধ্যে বৃদ্ধা মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহত বৃদ্ধার ছেলে ও পুত্রবধূকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বিকেলে কুমিল্লা সিটি কপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের রামনগরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মৃত আবু তাহেরের স্ত্রী লুৎফা বেগম (৭০) ও মেয়ে আয়েশা আক্তার শিল্পী (৩৮)। আটক ব্যক্তিরা হলেন লুৎফা বেগমের ছেলে শাহিন আলম ও তাঁর স্ত্রী লাকি আক্তার।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত লুৎফা বেগম ও তাঁর মেয়ে আয়েশা আক্তার শিল্পী অভিযুক্ত শাহিনের সঙ্গে একই ঘরে থাকতেন। মা-ছেলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। শাহিন তাঁর মা ও বোনকে প্রকাশ্যে একাধিকবার মারধর করেছেন।
পিরোজপুর (আঞ্চলিক) : ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় গৃহবধূ আসমা আক্তারকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার সন্ধ্যায় জুনিয়া গ্রামে নিজ বসতঘরে ওই গৃহবধূ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। আসমা আক্তার ওই গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী।
নাটোর : সদর উপজেলার দিঘাপাতিয়া ইউনিয়নে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত ৩টায় নেপালদীঘি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত নবীর আলী (৬৫) সদর উপজেলার ইসলামী বাড়ি গ্রামের নুরু সরদারের ছেলে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পূর্ব শত্রুতার কারণে নবীর উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করে চুরির অপবাদ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নাটোর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে।
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) : গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় আরাফাত (৯) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আরাফাত ওই গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। তার বাবা হেলাল মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলের মাথায় একটু সমস্যা ছিল। কথাবার্তা শুনত না। তাকে না পেয়ে আমরা খোঁজাখুঁজি করছিলাম। কারণ সে আগেও প্রায়ই গাছে উঠে বসে থাকত। পরে আমার এক ভাবি গিয়ে দেখে গাছে ঝুলে আছে।’
দুর্গাপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ কিংবা সন্দেহ না থাকায় তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
মনোহরদীতে মরদেহ উদ্ধার : নরসিংদীর মনোহরদীতে আবু সাইদ (৪২) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে উপজেলার চন্দনপুরে জাম গাছে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় সাইদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, সাইদ রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনোহরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহতাবুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের পা মাটিতে লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
মুন্সীগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকে তিন শ্রমিকের লাশ : মুন্সীগঞ্জ শহরের আফতাব উদ্দিন মার্কেটের পাশে নির্মীয়মাণ ভবনের সেপটিক ট্যাংকে তিনজন নির্মাণ শ্রমিকের লাশ পাওয়া গেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় মরদেহগুলো উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। উদ্ধারকৃতরা বগুড়ার ইব্রাহিম (২৮), গাইবান্ধার শাহীন ইসলাম (২২) ও রংপুরের ফিরোজ (১৮) বলে জানা গেছে।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করি। সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে অতিরিক্ত গ্যাস থাকায় শ্রমিকরা মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’
